#Feni ফেনীতে একদিনের ভ্রমণ।
বাংলাদেশের ১ম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র সাথে ২য় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। সাথে অনেক কিছু।।।
কামলা সমাজের যা হয় আরকি, হাতে সময় খুবই কম। কই যাই কই যাই করতেই, সবেধন সাধের অফ ডে টাও চলে যায়। এই কই যাই কই যাই করা কামলা সমাজের জন্য একদিনের মাঝেই ঘুরে আসার মত অসাধারণ এক জায়গা ফেনী। শুরু টা ঢাকার টিটি পাড়া হতে। কারন এখান থেকেই ছাড়ে ফেনীর প্রায় সকল বাস। যদিও বা উত্তরা ও মিরপুর হতেও কিছু কিছু ছাড়ে।
এক শুক্রবার সাত সকালে বেরিয়ে পড়লাম বাসা হতে। প্রাথমিক লক্ষ টিটি পাড়া, কারন সেখান থেকেই প্রতি ১৫ মিনিট পর পর নন এসি ও ১ ঘন্টা পর পর এসি বাস ছেড়ে যায় ফেনীর উদ্দেশ্যে। গিয়েই কাটতে হয় টিকিট তাই এই সিস্টেমের ভাল মন্দ দুটো দিক'ই পাবেন ফিল করতে। যাইহোক দিনটা যেহেতু শুক্রবার সাত সকালে ভালই ছিল যাত্রী চাপ, অন্যদিকে ফির বাস নেই তাই ৭ টার আগে গিয়ে পৌছালেও আমার ভাগে পড়লো ৮:৩০ এর এসি বাস। বাস ভাড়া মাত্র ৩৫০ টাকা। যথা সময়ে বাসে চেপে বসলাম আর বাস ছুটতে শুরু করলো ফেনীর উদ্দেশ্যে। পথে অবশ্য কুমিল্লায় ব্রেক ১৫ মিনিটের। ঘড়ির কাটা যখন জানান দিলো ৩ ঘন্টা পার বাসে বসেই, ঠিক তখনি পৌছালাম ফেনীতে। খুবি ছোট্ট কিন্তু সাজানো গোছানো শহর ফেনী। ওই এক রাস্তা ধরে ছুটে চললেই পেয়ে যাবেন মোটামুটি যা যা থাকার সব। রাজারঝির দীঘি ছাড়া ফেনী শহরে থাকার মত দেখার মত ততোটা কিছুই নেই তাই ফ্রেস হয়ে, খেয়ে দেয়ে, নামাজ পড়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম। এবার ছুটে চলা ফেনী ও চিটাগাং সংযোগ স্থল মুহুরী প্রজেক্টে। ফেনী জেলা শহর হতে মাত্র ২৯ কিলোমিটার দূরে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার অবস্থিত এই জায়গাতেই আছে বাংলাদেশের ১ম বায়ু বিদ্যুত কেন্দ্র, আছে বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প, আছে দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য জোন। আর হ্যা এই সবই বর্তমান সময়ের আলোচিত ফেনী নদীকে ঘিরেই।
কিভাবে যাবেন-
ফেনী হতে সোনাগাজী উপজেলা বাসে তারপর সোনাগাজী হতে ব্যাটারি চালিত অটোতে যেতে পারেন। কিংবা ফেনী হতে সরাসরি সিএনজি বা কার মাইক্রো বাস ভাড়া করেই চলে যেতে পারেন মুহুরী প্রজেক্টে।
১৯৭৭-৭৮ অর্থ বছরে মুহুরী সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮৫-৮৬ অর্থ বছরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই সেচ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ফেনী নদী, মুহুরী নদী এবং কালিদাস পাহালিয়া নদীর সম্মিলিত প্রবাহকে আড়ি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ৪০ ফোক্ট বিশিষ্ট একটি বৃহদাকার পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরী করে ফেনী জেলার ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, সোনাগাজী এবং চট্রগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার কিয়দংশ এলাকায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার প্রকোপ কমানো ও আমন ফসলে অতিরিক্ত সেচ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল মুহুরী সেচ প্রকল্প। অসাধারণ পরিস্কার নীল আকাশ আর বাঁধে থেকে বের হওয়া পানির প্রবল তেজ, অন্য দিকে শান্ত পানির লেক। চাইলেই নৌকায় চড়ে করে নিতে পারেন খানিকটা নৌবিহার।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মুহুরী রেগুলেটরের চারদিকে বাঁধ দিয়ে ঘেরা কৃত্রিম জলরাশি, বনায়ন, মাছের অভয়ারণ্য, পাখির কলকাকলি, বাঁধের দুপাশে নীচে খেকে পাথর দিয়ে বাঁধানো এবং উপরদিকে দুর্বা ঘাসের পরিপাটি বিছানা। মুহুরী জলরাশিতে নৌভ্রমণের সময় খুব কাছ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস এবং প্রায় ৫০ জাতের হাজার হাজার পাখির দেখা পাওয়া যায় শীতে। আর তাই আসছে শীতের কই যাই কই যাই লিস্টে রাখতে পারেন মুহুরী প্রজেক্টের নাম।
এই মুহুরী প্রজেক্ট এলাকা, বর্তমানে মৎস্য চাষে বিপ্লব ঘটিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য জোন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানেই দেশের অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য প্রকল্প গড়ে তুলেছে।
এই মুহুরী প্রকল্পের পাশেই প্রায় ৫০০ গজ দূরে থাকা খোয়াজের লামছি গ্রামে আছে বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। প্রকল্প এলাকার পাশ দিয়ে ফেনী নদী বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। দক্ষিণে বিস্তীর্ন মাঠ এবং বন বিভাগের সবুজ বেষ্টনী আর এরই মাঝে বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২২৫ কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ৪ টি টারবাইন বসানো আছে যা দিয়ে সর্বোচ্চ ০.৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। বিকালে ওই মুহুরী প্রজেক্ট ঘুরেই পাশের বাজারে টুকটাক পেট ঠান্ডা করে ধরতে পারেন ফিরতি পথ। শহরে পৌছে উঠে পড়তে পারেন ঢাকা গামী স্টার লাইন বা এনা বাসে। ৩-৪ ঘন্টার মধ্যেই পৌছে যাবেন ঢাকাতে। আর এই মাধ্যমেই শর্ট কাটে একটু দূরের, একদিনের এক জমপেস ট্যুর দিয়ে ফেলতে পারেন। সকালে রওনা দিয়েই সারা দিন ঘুরে ফিরে খেয়ে দেয়ে রাতের মধ্যে যারা ফিরতে চান পরের দিন আবার কামলা খাটায় ব্যাক যাওয়ার জন্য তাদের জন্য একদিনের ট্যুরের জন্য বেস্ট ডেসটিনেশন হতে পারে ফেনী।
Comments
Post a Comment